বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬


আজ থেকে প্রায় ৮৫০ বছরেরও বেশি আগের কথা । ভারতীয় উপমহাদেশ তখন পৌত্তলিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ । তাওহীদের বাণী তখনও সেভাবে প্রচার হয়নি । কিছু মুসলিম রাজারা থাকলেও তাদের অবস্থা ছিল খুবই করুণ । আল্লা-হ' রাব্বুল আ-লামী-ন এর মর্জি হল তার একজন প্রিয় বান্দাকে এখানে প্রেরণ করা হবে । রাসুল সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর রওজা শরীফ থেকে সেই মহান ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়া হল ভারতবর্ষ পরিচালনার । কিন্তু ভারতে আসার পথঘাট তার জানা ছিল না । তাই তাকে একটি আতা ফল দেয়া হল যেখানে ভারতের আজমীরে আসার মানচিত্র ছিল । সেই মানচিত্র ধরেই তিনি ভারতবর্ষে আগমন করেন । আর তিনি হলেন নবী করীম সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বংশের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র আতায়ে রাসুল হযরত খাজা গরীবে নওয়ায মুঈনুদ্দিন হাসান চিশতী সানজেরী আজমেরী রহমাতুল্লাহে আলাইহি । ৪০ জন সহচর সহ তিনি ভারতবর্ষের আজমীরে আগমন করেন । পথিমধ্যে তিনি লাহোরে অবস্থিত হযরত দাতা গঞ্জে বখশে লাহোরী রহমাতুল্লাহে আলাইহি এর পবিত্র মাজার শরীফে অবস্থান করেন এবং সেখানে ৪০ দিনের চিল্লা দেন । যে ঘরে তিনি চিল্লা দিয়েছিলেন সে ঘরটি এখনো সংরক্ষিত আছে ।
সে সময় ভারতের সে রাজ্যের রাজা ছিল পৃত্থিরাজ । হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহে আলাইহি যখন তাওহীদের বাণী প্রচার শুরু করেন তখন পৃত্থিরাজ তার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করে । তিনি সব ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবেলা করেন ।
ভারতবর্ষে প্রায় ৫০ বছর তিনি জাহেরীভাবে ছিলেন এবং এ সময়ের মধ্যে তিনি প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষকে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত করেন । সুবহানাল্লাহ !!!
আল্লা-হ প্রদত্ত অনেক কারামতের অধিকারী ছিলেন তিনি । কিছু বর্ণনায় এসেছে যে, উনার মর্তবা এমনই ছিল যে, উনার চেহারা মোবারক দেখেই অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন । সুবহানাল্লাহ !!!
হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহে আলাইহি কর্তৃক আনাসাগরের পানি অদৃশ্য হওয়াঃ
আল্লা-হ রাব্বুল আ-লামী-ন প্রদত্ত হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহে আলাইহি এর অনেক কারামতের মধ্যে একটি কারামত এ ঘটনাটি উনার সম্পর্কে লেখা প্রায় সব কিতাবেই বর্ণিত আছে ।
রাজা পৃত্থিরাজ যখন দেখলেন মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতেছে তখন তিনি খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহে আলাইহি কে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করতে লাগল । তিনি শাদীদেব নামে এক তান্ত্রিককে প্রেরণ করলেও সে বিফল হয় এবং সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । সুবহানাল্লাহ !!!
এতে পৃত্থিরাজ আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে । তার মন্ত্রীপরিষদ তাকে বলল, 'আপনি মুসলমানদের জন্য আনা সাগরের পানি বন্ধ করে দিন । তাহলে দেখবেন পানি ছাড়া তাদের জীবন উষ্ঠাগত হয়ে পড়বে এবং এখান থেকে পালিয়ে জান বাচাবে' । রাজাও সে মোতাবেক ব্যবস্থা করে ফেলল । আদেশ জারি করা হলো, 'কোন মুসলমান ফকির বা মুসলমান আনা সাগরের পানিতে অবগাহন করতে পারবেনা, হাত-মুখ ধৌত করতে পারবেনা, অজু করতে পারবেনা এবং রান্না বান্না বা অন্য কাজের জন্য পানি আনাসাগর হতে নিয়ে যেতে পারবে না' । এরই মধ্যে হযরত খাজাবাবার শিষ্য-খাদেম আনাসাগরে গেল অজু করতে কিন্তু পাহারাদারগণ তাকে পানির নিকটে যেতে দিল না । সে এসে হযরত খাজাবাবাকে ব্যাপারটি বর্ণনা করলেন । হযরত খাজাবাবা বুঝতে পারলেন এটা পৃত্থিরাজের একটা নতুন চাল । তিনি তার এক বয়স্ক খাদেমকে ডেকে বললেন, "তুমি আমার কাসাচুবিটি(কাষ্ঠ নির্মিত অর্ধ ডিম্বাকৃতি ৮/১০ ইঞ্চি লম্বা পেয়ালা, যা সাধারণতঃ ফকির দরবেশগণ ব্যবহার করে থাকেন) নিয়ে আনা সাগরে যাও এবং পানি ভর্তি করে নিয়ে এসো । আমি আস্তানার এই টিলার উপর দাঁড়িয়ে রইলাম । আমার দৃষ্টি তোমাকে অনুসরণ করবে" ।
তিনি কাসাচুবা হাতে নিয়ে আনা সাগর পর্যন্ত আসলেন এবং পানি নিতে চাইলেন । কিন্তু পাহারাদার তাকে বাধা দিল । তিনি অনুনয় বিনয় করে বললেন, এ কাসাচুবিটায় সামান্য কিছু পানি নিব । সৈন্যগণ প্রথমে নিষেধ করলেও পরে ভাবল অল্প কিছু পানি নিলে কি এমন হবে । তাই তারা পানি নিতে দিল । সে খাদেম কাসাচুবিতে করে পানি ভর্তি করে পিছন ফিরে দেখলেন হযরত খাজাবাবা টিলার উপর দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছেন । এদিকে খাদেম আনা সাগরের সিড়ি বেয়ে উঠে আসতেই একটি হৈচৈ পড়ে গেলো ।
'আনা সাগরের পানি গায়েব । আনা সাগর পানি শূন্য হয়ে পড়েছে' । কেউই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । সবাই অবাক বিস্ময়ে আনা সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে । পাহারাদারদের প্রধান রাজদরবারে হাজির হয়ে বলল, 'মহারাজ সর্বনাশ হয়ে গেছে । মুসলমান ফকিরদেরকে আনা সাগরের পানি ব্যবহার করতে না দেওয়ায় তারা যাদু দিয়ে সব পানি শুকিয়ে ফেলেছে' । রাজা বলল তিনি যাদু দিয়ে পানি শুকিয়ে ফেলেছে তোমরা তোমাদের যাদুগীরের যাদু দ্বারা পানি ভরাট করিয়ে নাও । পাহারাদার বলল মহারাজ আজমীরে এমন কোন শক্তিধর যাদুগীর নেই যে যাদু বলে এমন অসাধ্য সাধন করতে পারবে । শাদীদেব থাকলে হয়ত চেষ্টা করে দেখতেন । কিন্তু তিনি তো ধর্মত্যাগী । তাকেও এখন পাওয়া যাবে না ।
রাজা দলবল নিয়ে নিজেই পরিস্থিতি দেখতে গেল । গিয়ে দেখলে অবস্থা খুবই করুণ । পানির জন্য চারদিকে হাহাকার । প্রজাদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল । তিনি ভেবে চিন্তে দেখলেন যিনি গায়েব করেছেন তিনিই একমাত্র পারেন এই পানি ফিরিয়ে আনতে । তিনি দু'জনকে নির্দেশ দিলেন হযরত খাজাবাবার আস্তানায় যেয়ে উনাকে বুঝিয়ে পানি ফেরত আনার জন্য সম্মত করতে ।
দু'জন গিয়ে হযরত খাজাবাবার আস্তনায় কুর্নিশ করে দাঁড়িয়ে রইল এবং সব কিছু খুলে বলল এবং তাদের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইল । দয়ার সাগর হযরত খাজা গরীবে নওয়ায রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার খাদেমকে নির্দেশ দিলে কাসাচুবি হাতে নিয়ে পানি আনা সাগরে ফেরত দিয়ে আসতে । খাদেম সে মোতাবেক গেল পানি ফিরিয়ে দিতে । রাজার লোক দু'জনও ছুটলেন পেছন পেছন ঘটনা কিভাবে ঘটে তা দেখার জন্য । খাদেম কাসাচুবির পানি আনা সাগরে ফেরত দিল আর ঐ দিকে হযরত খাজাবাব নির্দেশ দল পানি পূর্ণ হয়ে যাওয়ার আর সাথে সাথে পানি পূর্ন হয়ে গেল আনা সাগর । সুবহানাল্লাহ !!!
আসলে এ ঘটনাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখা একটি বইয়ে এভাবে লিখা হয়েছে যে পানি হচ্ছে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং অক্সিজের গ্যাসের সমন্ব্য় । যদি গ্যাস দুটি আলাদা থাকে তাহলে আমরা তা দেখব না কিন্তু মিলে গেলে দেখব ।
এ কারামতের দৃশ্য অবলোকনের পর বহু মন্দিরের পূজারী, অনেক রাজপুত ও অনেক পাহারাদার সৈনিক ও অনেক সাধারণ মানুষ হযরত খাজাবাবার হাতে হাত রেখে কালেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ ও বায়াত গ্রহণ করেছিলো । সুবহানাল্লাহ !!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন