বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬

নবী প্রেমিক ইমাম শেরে বাংলা রহঃ


নবী প্রেমে বিভোর প্রেমিক হৃদয়ের আকুলতা নিয়ে দরুদ পড়েন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর। নিজের জীবনকে বিকিয়ে দেন নবীজির সুন্নাত বাস্তবায়নে। এমন এক নবীপ্রেমিক হযরত আল্লামা আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর পুরো হৃদয় জুড়ে নবী প্রেমের উর্বর ক্ষেত্র। নূরের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নুরের ফুলকির উল্কিতে উদ্ভাসিত আশেকে মোস্তফার ব্যাকুল মন তাঁর। পৃথিবীর কোন সম্পদ, যশ, খ্যাতি যাঁকে টানেনা, শুধু টানে সবুজ মিনারের অদৃশ্য এক মায়াবি প্রেম। হাটহাজারী থানার অন্তর্গত মেখলের সৈয়দ বংশে ১৯০৬ সালে জম্ম নেন এই আশেকে মোস্তফা। প্রবল মেধার অধিকারী এই আশেকে রাসুল প্রাথমিক ও উচ্চতর শিক্ষা লাভের পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য দিল্লির বিখ্যাত ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রসায় ভর্তি হন। যদিও এই অসাধারণ মেধার অধিকারী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেন, মূলত তাঁর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। কারণ, খোদাতায়ালার পক্ষ থেকে তিনি এক আশ্চর্য ইলমের অধিকারী ছিলেন, যা দেখে অনেকে তাঁকে জীনের ছেলে বলেও আখ্যা দিতেন। তিনি ছিলেন এক বিরল নবী-প্রেমিক, যাঁর হৃদয়ের পুরো প্রান্তর নবীপ্রেমে ভরপুর, যে ভালবাসায় তিনি সিক্ত আজীবন। দুশমনে নবী দেখলে তিনি একেবারে বেসামাল হযে পড়তেন, তাদের সাথে তর্কে লেগে যেতেন। তাঁর জীবনে তিনি বহু দুশমনে নবীর সাথে বাহাস করেছেনে এবং জয়ী হয়েছেন। জয়ী হবেনও না কেন? এমন নির্ভিক বাঘের সাথে লড়বে কোন বীর? তিনি তো একটি পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরির মত, যাঁর সামনে বিশ্ব বিখ্যাত আলেমরাও বেলুনের মত চুপসে যেত। তিনি ছিলেন ইলমের এক মহাসাগর, যে মহাসাগরের ঢেউ-এ দুশমনে নবীরা আঁছড়ে পড়ে যেত। তাঁর সামনে অনেক আলেমও ওয়াজ ও কথা বলতে চরম ভয় পেতেন। হাটহাজারীর খন্দকিয়াতে ১৯৫১ সালের ২ জুন তিনি বাতিলের হামলার শিকার হন। মৃত্যু নিশ্চিত করে বাতেলরা স্থান ত্যাগ করে। পরে ত্াঁকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখানে চিকিৎসকগণ প্রথমে তাঁর ওফাত নিশ্চিত করেন; কিন্তু পরক্ষণে তাঁর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হতে দেখা যায়। যখন তিনি চোখ খুললেন, তিনি তখন বললেন, এই মাত্র রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবন ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন, সুবহানাল্লাহ। জানা গেছে, তিনি আরো বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা রসূলে পাকের দরবারে এ বলে তাঁর জীবন ভিক্ষা চান যে, এখনো দুশমনে রসূল ও আহলে বায়তের শত্রুদের মোকাবেলার কাজ অনেক বাকী আছে, এ মহান কাজের জন্য শেরে বাংলা আজিজুল হকের বেঁচে থাকা দরকার। সুতরাং রসূলে পাক ফরিয়াদ করেন এবং আল্লাহর দরবার থেকে তাঁর হায়াতের মঞ্জুরী নেন। তিনিও একথাটাই বলেছিলেন। ১৯৫৭ সালে শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হজ্ব পালনের নিমিত্তে পবিত্র মক্কায় গমন করেন। বাতেলরা এখানে হুজুরকে ঘায়েল করতে না পেরে সৌদি সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায় যে, তিনি ওহাবীদের ঘোর বিরোধী তাঁকে যেন গ্রেফতার করা হয়। সৌদি পুলিশ হুজুরকে গ্রেফতার করে সৌদি সরকারের গ্র্যান্ড মুফতীর নিকট নিয়ে যায়। সেখানে গ্র্যান্ড মুফতি হুজুরের জাহেরী ও বাতেনি ইলম দেখে নিজেই হুজুরের ভক্ত বনে যান এবং তাকে শেরে বাংলা উপাধি দিযে সম্মানিত করেন। আর বাকী মুফতীগণও তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত আল্লামা ছৈয়দ আহমদ ছিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে আল্লামা শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহে আলাহির ছিলো আত্মার সম্পর্ক। কারন এ দু’ মহান ওলীর উদ্দেশ্য ছিলো এ দেশে সুন্নিয়াত প্রতিষ্ঠিত হোক আর বাতিলরা নিপাত যাক। বাংলার জমিনে সুনিয়তের প্রসারে তিনি ছিলেন এক নিবেদিত প্রাণ। ৬৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের অবসানে তিনি ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে এ মহান অলি ইন্তেকাল করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন