বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন

মোজাদ্দেদ মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ্‌ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহঃ বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি সর্বপ্রথম প্রাথমিক শিক্ষা আপন সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আল কাদেরী মেখলী রহঃ এর নিকট লাভ করেন। অতঃপর কৈশোরকাল প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মঈনুল ভর্তি হন যা বর্তমানে হাটহাজারী ওহাবী মাদ্রাসা নামে পরিচিত। উল্লেখ্য তৎকালে টাইটেল মাদ্রাসার বড়ই অভাব ছিল। তাছাড়া উক্ত মাদ্রাসায় গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা হত। তাই দেওবন্দী ওহাবী আক্বিদা অনুযায়ী পরিচালিত হলেও অনেক সুন্নী আক্বিদার ছেলে নিরুপায় হয়ে উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করত। বাতিলপন্থিরা পরিচালনা করলেও তৎকালীন সুন্নী আলেমরাও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমাম পটভুমিকায় ব্যাপকহারে সুন্নী মাদ্রাসা ও মজবুত সুন্নী সংগটন সৃষ্টির ফলে সে পরিস্থিতির অবসান ঘঠেছে। এখম তন্ন তন্ন করে খুজলেও বর্তমান উক্ত হাটহাজারী ওহাবি মাদ্রাসায় সুন্নী আক্বিদার শিক্ষকতা তো দূরের কথা একজন সুন্নী ছাত্র পাওয়া যাবে না।

হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে দেওয়ান নগর নিবাসী প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জলিল রহঃ কে প্রিয় শিক্ষক হিসাবে লাভ করেছিলেন। হযরত শেরে বাংলা রহঃ অসাধারণ জ্ঞান-পিপাসু ও তেজস্বী ছিলেন। সমসাময়িক মেধাবী ছাত্রদের মধ্য তিনি ছিলেন অন্যতম মেধাবী ও শীর্ষস্থানীয়। কোন সময় ক্লাসে মেধাবী তালিকার প্রথম স্থান ব্যাতীত দ্বিতীয় স্থান লাভ করেননি। সহপাঠী ছাত্ররা প্রানপন চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে কোন সময় প্রথম স্থান অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারেননি।
কথিত আছে, তিনি যা একবার পাঠ করতেন বা শ্রবণ করতেন কিংবা অবলোকন করতেন তা কখনো বিস্মৃত হতেন না। এ কারণে তাঁকে অনেকে জ্বিনের সন্তান বলে আখ্যায়িত করতেন। অসাধারণ মেধাযম্পন্ন ও বিদ্যানুরাগী সূক্ষদর্শী আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ মাদ্রাসা অধ্যয়নকালে আরবী, উর্দু ও ফারসি ভাষাসমূহের মধ্যে এক গভীর তত্ত্বজ্ঞানের সন্দ্বান লাভ করেন। এ সমস্ত বিষয়ের উপর তিনি অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। একই সময়ে কতিপয় নামধারী আলেম সমাজের নবী ও আউলিয়া কেরাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ তার দৃষ্টিগোচর হয়।  সরাসরি সম্পর্ক লাভের ফলশ্রুতিতে এ সমস্ত বাতিলপন্থি তথাকথিত আলেমগণের ইসলামের সঠিক রুপরেখা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পরিপন্থি ইমাম বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহের সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। ফলে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই এ সমস্ত বাতিনপন্থি আলেমগণের সাথে বাহাস বা তর্কে লিপ্ত হতেন। তার সুতীক্ষ্ণ চিন্তাধারা ও অসাধারণ জ্ঞানের মোকাবেলায় অনেক বাতিলপন্থী বড় আলেমও কোণঠাসা হয়ে পড়ত। এই সময়ে তিনি হাদীস,ফিকাহ ও তর্ক শাস্ত্রেও অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অবশেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে টাইটেল পাস করে মাদ্রাসার শেষ সনদ লাভ করেন। তাই তার মূল শিক্ষা জীবনের সম্পূর্ণটায় দেখা যায় ওহাবী মাদ্রাসায় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু তথাপি তিনি ছিলেন ওহাবী চিন্তাধারা থেকে সদামুক্ত,নিস্কলুষ ও পূতঃপবিত্র। বরঞ্চ ওহাবীদের সংস্পর্শ ও তাদের বদ আক্বিদার কিতাবাদী পঠনের ফলে তার ইমাম আক্বীদা মজবুত হয়েছে এবং পরবর্তিতে বাতিলদের বিরুদ্বে তর্ক ও জেহাদ করার পথ সুগম করেছে। প্রমাণ স্বরুপ দেখা যায়, তিনি বাহাস বা ওয়াজের মাহফিলে ওহাবী আক্বিদার কিতাবের নাম ও পৃষ্টা নাম্বার সহ উপস্থাপন করতেন। সোবাহানাল্লাহ!  ওহাবীদের  ভ্রান্ত আক্বিদার কিতাবসমূহ তার কণ্টস্থ ও নখদর্পণে ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত সৈয়্যদেনা মুসা আঃ ফেরাউনের ঘরে লালন - পালন হয়ে ফেরাউনকে ধংস করেছিলেন।ঠিক সেইভাবে আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ ওহাবীদের প্রতিষ্টানে লেখাপড়া করে তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার বিরুদ্বে জেহাদ করেছেন। এ যেন মহান সৃষ্টিকর্তার এক রহস্যময় অভিপ্রায় ও এহসান। তিনি তার একজন যোগ্যতম প্রতিনিধি ও প্রকৃত আশেকে রাসুলকে দ. প্রকৃতির লীলা নিকতনে অনুসন্ধিৎসু পরিক্ষণের মাধ্যমে নির্ভেজাল শিক্ষালাভের ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন। আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর জন্য এটা একদিকে নিরীক্ষণমূলক জ্ঞান লাভের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, অপরদিকে মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য ছিল ইমান - আক্বিদার উপর বিরাট পরীক্ষা। যেই পরীক্ষায় তিনি পরিপূর্ণভাবে কামিয়াব হয়েছিলেন। তিনি নবী ও আউলিয়া বিদ্বেষী ওহাবীদের ইমান বিধ্বংসী আক্বীদার সাথে বিন্দু পরিমাণও আপোষ করেননি বরঞ্চ তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার বিরুদ্বে বজ্রকণ্টে প্রতিবাদ করেছে।

টাইটেল পাস করার পর তিনি কোরআন, হাদীস, ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতার শিক্ষা লাভ করার জন্য হিন্সুস্থান গমন করেন। দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রাসার ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি দরখাস্ত পেশ করেন। উক্ত মাদ্রাসায় প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মুফতী কেফায়ত উল্লাহ ছাহেব তার ইন্টারভিউ গ্রহণ করেন। তিনি হযরত শেরে বাংলা রহঃ এর মেধাশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার সমস্ত খরচ বহন করে মাদ্রাসায় ভর্তি ব্যাবস্থা করে দেন।  সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বুৎপত্তি অর্জন করেন এবং দাওরায়ে হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীর সনদ লাভ করেন।
ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে আশেকে রাসুল দ. আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর মোবারক জীবনে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আল্লাহর রহমত ও কুদরতে এবং প্রিয় নবী দ. এর মেহেরবাণিতে তিনি ইলমে লাদুন্নিয়া তথা বাতেনী রহস্যজ্ঞানের ধারক হযরত খাজা খিজির আঃ এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। উক্ত মহাপুরুষ তাকে সম্নেহে আলিঙ্গন করেন এবং পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে ৪টি ছবক পাঠ করিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। এ ঘটনার পর থেকে তার জ্ঞান ও স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়। বাতিল ও ওহাবীদের বিরুদ্বে বাঘের ন্যায় তেজোদীপ্ত হুংকার পরিলক্ষিত হতে থাকে। মাঠে ময়দানে তিনি রাসুলদ্রোহীদের বিরুদ্বে আপোষহীন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে থাকেন। অপরদিকে খোদাভীতি ও রাসুল দ. এর প্রতি মহব্বত সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে তার মোবারক জীবনে এক অনুপম হোসাইনী আদর্শের বিকাশ ঘঠে। বাতিলদের বিরুদ্বে খড়গহস্তে প্রচন্ড বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুধাবন করলেন। তাই উক্ত মাদ্রাসায় অল্প কিছুদিন অবস্থান করে তিনি স্বীয় জন্মভূমি চট্টলার জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন।

ইসলামিক ও শিক্ষণীয় পোস্ট পেতে সবসময় আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন facebook.com/sreepure.   fb ইমাম শেরে বাংলা রহঃ
ইউটিউব আমাদের চ্যানেল সাবক্রাইব করে দরকারী দলিলযুক্ত ভিডিও দেখুন
you tube > ইমাম শেরে বাংলা রহঃ
ইসলামিক বিভিন্ন প্রশ্নাবলী সম্বন্দে জিজ্ঞাসা করতে আমাদের ওয়াটসপ গ্রুফে জয়েন করার জন্য আপনার পরিচয় নাম্বার আমাদের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে পাঠিয়ে দিন। whatsapp > আশেকে ইমাম শেরে বাংলা রহঃ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন