শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

পবিত্র শবে বরাত এর প্রতিটি সময় অতি মূল্যবান



শবে বরাতের প্রতিটি ক্ষণ অতি মূল্যবান। এটি আপনার মালিকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য বিশেষ দয়া ও রহমত। এ রাতের প্রতিটি মূহুর্ত আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি’র জন্য ব্যয় করা উচিত। নফল ইবাদত, নামাজ, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, জিকির আসকার ইত্যাদির মাধ্যমে সারারাত অতিবাহিত করা উচিত। ফরজ নামাজগুলো অবশ্যই জামাতে পড়বেন। এ রাতে এমন কোন প্রোগ্রাম রাখবেন না যাতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। একাগ্রচিত্তে আল্লাহ ও রসূলের ( দঃ ) দিকে মনোনিবেশ করুন। দান খয়রাত করুন, চেষ্টা করুন অভাবী ও সাহায্যপ্রার্থীদেরকে ফিরিয়ে না দিতে। ভালখাবার তৈরি করুন । নিজেরা খান, অন্যকে খাওয়ান। আমাদের দেশে এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরির প্রচলন আছে তা করতে পারেন। কোন সমস্যা নাই। কিছু কিছু লোক আপনাকে হালুয়া রুটি তৈরি করত নিষেদ করবে। এরা এক ধরনের বেকুব বটে। খাবার দাবার হালাল হলেই সেটা করা যায়, খাওয়া যায় এতে কোন নিষেদ নাই। আমাদের দেশে আমরা ছোলামুড়ি দিয়া ইফতার করি, ঈদের দিন সেমাই পাকাই। এগুলো কোনটাই অবৈধ নয়। একইভাবে শবে বরাতে হালুয়া রুটি খেলে অন্যকে খাওয়ালে ভাল’র চেয়ে মন্দ কিছু নাই। আল্লাহতো অন্যকে খাওয়ানো পছন্দ করেন। নিজে খাবেন, গরীব দুঃখী, আত্মীয় বন্ধুকে খাওয়াবেন। তবে এই খাওয়া দাওয়া যাতে ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটায়।
 এ রাতে গোসল করাও পূণ্যময়। এ রাতে গোসলের প্রতি ফোটা পানির জন্য রয়েছে অতি উত্তমপ্রতিদান।কোনো বিষয়কে হারাম বলতে হলে নির্ভরযোগ্য প্রামাণিক দলিল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক;

🎒===ইসলামে কোন বিষয় কে হালাল হারাম করতে সুনিদিষ্ট দলিল দরাকার।
হযরত আবু দারদা (রা:) বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (দ:) বলেন: ”আল্লাহতা’লা তাঁর কেতাবে (কুরআনে) যা কিছুর অনুমতি দিয়েছেন তা হালাল, যা কিছু নিষেধ করেছেন তা হারাম; আর যে ব্যাপারে নীরবতা পালন করেছেন, তা ক্ষমাপ্রাপ্ত । অতএব, আল্লাহর ক্ষমা গ্রহণ করো, কেননা আল্লাহ বিস্মৃত হন না।” অতঃপর মহানবী (দ:) নিচের আয়াতে করীমা তেলাওয়াত করেন, ’আর আপনার প্রভু খোদাতা’লা কখনো বিস্মৃত হন না’ (সূরা মরিয়ম, ১৯:৬৪)। [ইমাম হায়তামী কৃত ’মজমাউয্ যাওয়াইদ’, ১:১৭১, হাদীস নং ৭৯৪]

ইমাম হায়তামী (রহ:) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন আল-বাযযার এবং তাবারানী তাঁর ‘কবীর’ গ্রন্থে, ’যার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের এসনাদ (সনদ) হাসান পর্যায়ভুক্ত।’
এই হাদীসকে সহীহ বলেছে নাসিরুদ্দীন আলবানীও, তার রচিত ‘সিলসিলাত আস্ সহীহাহ্ পুস্তকে (৫:৩২৫)

¤¤ ফরমানে মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম): "যখন
মানুষ নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য সাওয়াবের নিয়্যতে ব্যয় করে তবে তা তার জন্য সদকাস্বরূপ ।"  (বুখারী, হাদীসঃ ৫৫)

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস থেকে এটা জানা গেল যে, কোন মুবাহ (অথাত্-বৈধ) কাজও যদি ভাল নিয়্যতে করা হয়, তবে এটির জন্য সাওয়াব রয়েছে। ঘরের সদস্যদের লালন পালন মানুষ এমনিতেই করে থাকে কিন্তু যদি তাদের লালন পালন আল্লাহ তা'আলার সন্তষ্টির জন্য করা হয় তবে এটির ও সাওয়াব রয়েছে । সুবহানআল্লাহ ।
(নুযহাতুল ক্বারী, ১ম খন্ড, ৩৯৯ পৃষ্টা)

সুতরাং শব ই বরাত একটি বরকতময় রাত,এইরাত্রে যত ইবাদত করা যায় তত উত্তম,দান সদকা,ইত্যাদিও ইবাদতের অংশ।কেও যদি সওয়াবের নিয়তে নিজ পরিবার,প্রতিবেশী,আত্বীয় স্বজন কে সওয়াবের নিয়তে ভালো
খাবার খাওয়ানো হয় সেটিও সদকাসরুপ,আর সেটিওকে বেদাত বলার জন্য সুনিদিষ্ট দলিলের দরকার।

🎓===শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো
উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন