শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ও দোয়া




আল্লাহ তাআলা বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যৌন সম্ভোগ তথা বংশ বৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় বৈধ কার্যক্রম হয়ে ওঠে কল্যাণ ও ছাওয়াবের কাজ। বংশবৃদ্ধির একমাত্র মাধ্যমে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস। এর রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি ও দোয়া। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
দোয়টি এই-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা। 
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি,  তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে,  তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখ।’
আলিমদের কাছ থেকে শুদ্ধ উচ্চাারণ শিখবেন
ফজিলতঃ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে,  সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,  যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে,  তার নিয়্যাত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়্যাতে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়। 

স্ত্রী সহবাসের রয়েছে কতিপয় নিয়ম
০১. স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে।
০২. "বিসমিল্লাহ" বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। ভুলে গেলে যদি বীর্যপাতের পূর্বে স্মরণ হয় তাহলে মনে মনে পড়ে নিতে হবে।
০৩. সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত।
০৪. সব ধরনের দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস পরিহার করা। উল্লেখ্য যে,  ধূমপান কিংবা অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আর এতে কামভাব কমে যায়। আগ্রহের স্থান দখল করে নেয় বিতৃষ্ণা।
০৫. কেবলামুখি হয়ে সহবাস না করা।
০৬. একেবারে উলঙ্গ না হওয়া।
০৭. স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দান করার পূর্বে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
০৮. বীর্যপাতের সময় মনে মনে নির্ধারিত দোয়া পড়া। কেন না যদি সে সহবাসে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সন্তান শয়তানের প্রভাব মুক্ত থাকবে।
০৯. স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের (ঋতুকালীন) সময় সহবাস না করা।
১০. চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া।
১১. স্ত্রীর জরায়ুর দিকে চেয়ে সহবাস না করা।  
১২. বিদেশে বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৩. সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা না বলা।
১৪. জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৫. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৬. উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৭. স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন

মোজাদ্দেদ মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ্‌ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহঃ বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি সর্বপ্রথম প্রাথমিক শিক্ষা আপন সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আল কাদেরী মেখলী রহঃ এর নিকট লাভ করেন। অতঃপর কৈশোরকাল প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মঈনুল ভর্তি হন যা বর্তমানে হাটহাজারী ওহাবী মাদ্রাসা নামে পরিচিত। উল্লেখ্য তৎকালে টাইটেল মাদ্রাসার বড়ই অভাব ছিল। তাছাড়া উক্ত মাদ্রাসায় গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা হত। তাই দেওবন্দী ওহাবী আক্বিদা অনুযায়ী পরিচালিত হলেও অনেক সুন্নী আক্বিদার ছেলে নিরুপায় হয়ে উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করত। বাতিলপন্থিরা পরিচালনা করলেও তৎকালীন সুন্নী আলেমরাও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমাম পটভুমিকায় ব্যাপকহারে সুন্নী মাদ্রাসা ও মজবুত সুন্নী সংগটন সৃষ্টির ফলে সে পরিস্থিতির অবসান ঘঠেছে। এখম তন্ন তন্ন করে খুজলেও বর্তমান উক্ত হাটহাজারী ওহাবি মাদ্রাসায় সুন্নী আক্বিদার শিক্ষকতা তো দূরের কথা একজন সুন্নী ছাত্র পাওয়া যাবে না।

হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে দেওয়ান নগর নিবাসী প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জলিল রহঃ কে প্রিয় শিক্ষক হিসাবে লাভ করেছিলেন। হযরত শেরে বাংলা রহঃ অসাধারণ জ্ঞান-পিপাসু ও তেজস্বী ছিলেন। সমসাময়িক মেধাবী ছাত্রদের মধ্য তিনি ছিলেন অন্যতম মেধাবী ও শীর্ষস্থানীয়। কোন সময় ক্লাসে মেধাবী তালিকার প্রথম স্থান ব্যাতীত দ্বিতীয় স্থান লাভ করেননি। সহপাঠী ছাত্ররা প্রানপন চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে কোন সময় প্রথম স্থান অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারেননি।
কথিত আছে, তিনি যা একবার পাঠ করতেন বা শ্রবণ করতেন কিংবা অবলোকন করতেন তা কখনো বিস্মৃত হতেন না। এ কারণে তাঁকে অনেকে জ্বিনের সন্তান বলে আখ্যায়িত করতেন। অসাধারণ মেধাযম্পন্ন ও বিদ্যানুরাগী সূক্ষদর্শী আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ মাদ্রাসা অধ্যয়নকালে আরবী, উর্দু ও ফারসি ভাষাসমূহের মধ্যে এক গভীর তত্ত্বজ্ঞানের সন্দ্বান লাভ করেন। এ সমস্ত বিষয়ের উপর তিনি অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। একই সময়ে কতিপয় নামধারী আলেম সমাজের নবী ও আউলিয়া কেরাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ তার দৃষ্টিগোচর হয়।  সরাসরি সম্পর্ক লাভের ফলশ্রুতিতে এ সমস্ত বাতিলপন্থি তথাকথিত আলেমগণের ইসলামের সঠিক রুপরেখা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পরিপন্থি ইমাম বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহের সম্পর্কে সম্যক অবগত হন। ফলে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই এ সমস্ত বাতিনপন্থি আলেমগণের সাথে বাহাস বা তর্কে লিপ্ত হতেন। তার সুতীক্ষ্ণ চিন্তাধারা ও অসাধারণ জ্ঞানের মোকাবেলায় অনেক বাতিলপন্থী বড় আলেমও কোণঠাসা হয়ে পড়ত। এই সময়ে তিনি হাদীস,ফিকাহ ও তর্ক শাস্ত্রেও অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অবশেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে টাইটেল পাস করে মাদ্রাসার শেষ সনদ লাভ করেন। তাই তার মূল শিক্ষা জীবনের সম্পূর্ণটায় দেখা যায় ওহাবী মাদ্রাসায় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু তথাপি তিনি ছিলেন ওহাবী চিন্তাধারা থেকে সদামুক্ত,নিস্কলুষ ও পূতঃপবিত্র। বরঞ্চ ওহাবীদের সংস্পর্শ ও তাদের বদ আক্বিদার কিতাবাদী পঠনের ফলে তার ইমাম আক্বীদা মজবুত হয়েছে এবং পরবর্তিতে বাতিলদের বিরুদ্বে তর্ক ও জেহাদ করার পথ সুগম করেছে। প্রমাণ স্বরুপ দেখা যায়, তিনি বাহাস বা ওয়াজের মাহফিলে ওহাবী আক্বিদার কিতাবের নাম ও পৃষ্টা নাম্বার সহ উপস্থাপন করতেন। সোবাহানাল্লাহ!  ওহাবীদের  ভ্রান্ত আক্বিদার কিতাবসমূহ তার কণ্টস্থ ও নখদর্পণে ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত সৈয়্যদেনা মুসা আঃ ফেরাউনের ঘরে লালন - পালন হয়ে ফেরাউনকে ধংস করেছিলেন।ঠিক সেইভাবে আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ ওহাবীদের প্রতিষ্টানে লেখাপড়া করে তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার বিরুদ্বে জেহাদ করেছেন। এ যেন মহান সৃষ্টিকর্তার এক রহস্যময় অভিপ্রায় ও এহসান। তিনি তার একজন যোগ্যতম প্রতিনিধি ও প্রকৃত আশেকে রাসুলকে দ. প্রকৃতির লীলা নিকতনে অনুসন্ধিৎসু পরিক্ষণের মাধ্যমে নির্ভেজাল শিক্ষালাভের ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন। আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর জন্য এটা একদিকে নিরীক্ষণমূলক জ্ঞান লাভের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, অপরদিকে মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য ছিল ইমান - আক্বিদার উপর বিরাট পরীক্ষা। যেই পরীক্ষায় তিনি পরিপূর্ণভাবে কামিয়াব হয়েছিলেন। তিনি নবী ও আউলিয়া বিদ্বেষী ওহাবীদের ইমান বিধ্বংসী আক্বীদার সাথে বিন্দু পরিমাণও আপোষ করেননি বরঞ্চ তাদের ভ্রান্ত আক্বিদার বিরুদ্বে বজ্রকণ্টে প্রতিবাদ করেছে।

টাইটেল পাস করার পর তিনি কোরআন, হাদীস, ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতার শিক্ষা লাভ করার জন্য হিন্সুস্থান গমন করেন। দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রাসার ভর্তি হওয়ার জন্য তিনি দরখাস্ত পেশ করেন। উক্ত মাদ্রাসায় প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মুফতী কেফায়ত উল্লাহ ছাহেব তার ইন্টারভিউ গ্রহণ করেন। তিনি হযরত শেরে বাংলা রহঃ এর মেধাশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার সমস্ত খরচ বহন করে মাদ্রাসায় ভর্তি ব্যাবস্থা করে দেন।  সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বুৎপত্তি অর্জন করেন এবং দাওরায়ে হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীর সনদ লাভ করেন।
ফতেহপুর আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে আশেকে রাসুল দ. আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ এর মোবারক জীবনে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আল্লাহর রহমত ও কুদরতে এবং প্রিয় নবী দ. এর মেহেরবাণিতে তিনি ইলমে লাদুন্নিয়া তথা বাতেনী রহস্যজ্ঞানের ধারক হযরত খাজা খিজির আঃ এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। উক্ত মহাপুরুষ তাকে সম্নেহে আলিঙ্গন করেন এবং পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে ৪টি ছবক পাঠ করিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। এ ঘটনার পর থেকে তার জ্ঞান ও স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়। বাতিল ও ওহাবীদের বিরুদ্বে বাঘের ন্যায় তেজোদীপ্ত হুংকার পরিলক্ষিত হতে থাকে। মাঠে ময়দানে তিনি রাসুলদ্রোহীদের বিরুদ্বে আপোষহীন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে থাকেন। অপরদিকে খোদাভীতি ও রাসুল দ. এর প্রতি মহব্বত সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে তার মোবারক জীবনে এক অনুপম হোসাইনী আদর্শের বিকাশ ঘঠে। বাতিলদের বিরুদ্বে খড়গহস্তে প্রচন্ড বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুধাবন করলেন। তাই উক্ত মাদ্রাসায় অল্প কিছুদিন অবস্থান করে তিনি স্বীয় জন্মভূমি চট্টলার জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন।

ইসলামিক ও শিক্ষণীয় পোস্ট পেতে সবসময় আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন facebook.com/sreepure.   fb ইমাম শেরে বাংলা রহঃ
ইউটিউব আমাদের চ্যানেল সাবক্রাইব করে দরকারী দলিলযুক্ত ভিডিও দেখুন
you tube > ইমাম শেরে বাংলা রহঃ
ইসলামিক বিভিন্ন প্রশ্নাবলী সম্বন্দে জিজ্ঞাসা করতে আমাদের ওয়াটসপ গ্রুফে জয়েন করার জন্য আপনার পরিচয় নাম্বার আমাদের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে পাঠিয়ে দিন। whatsapp > আশেকে ইমাম শেরে বাংলা রহঃ

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ্‌ সৈয়দ মোহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহঃ এর জন্ম ও বংশ পরিচয়

বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ও গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী কঃ এর পবিত্র জন্মভূমি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্গত মেখল একটি বর্ধিষ্ণু ও সুপরিচিত গ্রাম। এই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত  সৈয়দ পরিবারে ১৩২৩ হিজরী ১৩১৩ বাংলা এবং ১৯০৬ ইংরেজীরে কোন এক মুহুর্তে মোজাদ্দেদ দ্বীন মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাত কুতুবে আলম গাউসে জামান হযরতুল আল্লামা গাজী শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ আজীজুল হক শেরে বাংলা রহঃ এই ধরাপৃষ্টে শুভাগমন করেন। তার দাদাজানের নাম হযরত মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসমত উল্লাহ রহঃ। তার সম্মানিত বুযুর্গ পিতা হলেন হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আবদুল হামিদ আল কাদেরী মেখলী রহঃ। তার সম্মানিত বিদুষী, সাধ্বী, পূণ্যময়ী রত্ন গর্ভ জননী হলেন সৈয়দা মোছাম্মৎ মায়মুনা খাতুন রহঃ। সুতারাং আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ আওলাদে রাসুল দ.।  মাতৃকুল ও পিতৃকুল উভয় দিকদিয়ে তিনি সৈয়দ বংশীয় ছিলেন। তাছাড়া সূপ্রসিদ্ব ও ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে তার জন্ম। এ যেন মহান সৃষ্টকর্তা রাব্বুল আলামিনের সুনিপুণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয়। যে বংশ ও পরিবারের মাধ্যমে চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ ও ইমামকে এই পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করার সেটা যেন মহান আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন।

হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ বংশ পরিক্রমায় রাউজানের সুলতানপুর হাজীপাড়াস্থ হযরত মাওলানা কাজী এজাবতুল্লাহ শাহ্‌ রহঃ, ফরহাদাবাদের হযরত মূফতী মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী রহঃ এবং লালিয়ারহাট সুন্নিকটস্থ হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ হোসাইনুজ্জামান রহঃ প্রমুখ বিখ্যাত আলেম ও অলিয়ে কামেল ব্যাক্তিবর্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এখানে উল্লেখ্য, হুজুরের দাদাজান হযরত মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসমত উল্লাহ রহঃ হলেন হযরত মাওলানা কাজী এজাবতুল্লাহ শাহ্‌ রহঃ এর আপন ভ্রাতা এবং হযরত মাওলানা শাহসূফী মূফতী সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী রহঃ হলেন সম্পর্কে হুজুরের আপন জাঠা।

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

বিবাহের গুরুত্ব ও ইসলামিক পদ্ধতি ও তার সাথে প্রচলিত কিছু বাতিল....হাদিস ও কোরআন এর আলোক পাট২


বিবাহের গুরুত্ব ও ইসলামিক পদ্ধতি ও তার সাথে প্রচলিত কিছু বাতিল....হাদিস ও কোরআন এর আলোক পাট২


(৮) মোহরানা নির্ধারণ : বিবাহের আগে মোহরানা নির্ধারণ করা এবং বিবাহের পর তা স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া ফরয। আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النَّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন,أَحَقُّ الشُّرُوْطِ أَنْ تُوْفُوْا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوْجَ ‘(বিবাহে) সবচেয়ে বড় শর্ত যেটা তোমরা পূর্ণ করবে, সেটা হ’ল যা দ্বারা তোমরা লজ্জাস্থানকে হালাল কর’।[1] অর্থাৎ মোহর।

সাহল ইবনু সা‘দ (রাদ্বিয়াল্লাহুয়াতায়ালা আনহু) হ’তে বর্ণিত, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম )-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলআলাইহিসালাম )! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলালাইহি ওসাল্লালাম) তার দিকে তাকালেন এবং তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তার সম্পর্কে কোন ফায়ছালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর ছাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)! যদি আপনার বিবাহের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিবাহ দিয়ে দিন। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কী? সে উত্তর দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি-না। তারপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়লা আলাইহিসালাম ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার চলে গেল। ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)! লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। সাহল (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি লুঙ্গির অর্ধেক মহিলাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়লা আলাইহি ওসাল্লালাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহ’লে তার কোন কাজে আসবে না। আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। এরপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর সে উঠে দাঁড়াল ও নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) তাকে যেতে দেখে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কী তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাকে তোমার অধীনস্থ করে দিলাম’।[2]

স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহরানা দিতে হবে। যখন আলী (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা)-কে বিবাহ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তাঁকে বললেন, তুমি ফাতিমাকে (মোহরানা স্বরূপ) কিছু দাও। আলী (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বললেন, আমার নিকট কিছু নেই। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তাকে বললেন, তোমার হুতামী বর্মটি কোথায়’?[3] অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন, تَزَوَّجْ وَلَوْ بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيْدٍ ‘তুমি বিবাহ কর, একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হ’লেও’।[4]

উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ মোহর বাকী রাখা যায়। তবে সেটা ঋণের অন্তর্ভুক্ত। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর বাকী থাকলে সন্তান অবৈধ হবে একথা ঠিক নয়। কেননা বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা শর্ত নয়। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাআলাইহি ওসাল্লালাম) একজন ব্যক্তিকে বললেন, অমুক মহিলার সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বললেন, অমুক ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি তাদের বিবাহ দিলেন। কিন্তু কোন মোহর নির্ধারণ করলেন না এবং মহিলাকে কিছু দিলেন না। ঐ ব্যক্তি হোদায়বিয়ার ছাহাবী ছিলেন। পরে তিনি খায়বরের গণীমতের অংশ পান। এ সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হ’লে তিনি বলেন, স্ত্রীর জন্য আমার কোন মোহর নির্ধারিত ছিল না। এক্ষণে আমি আমার খায়বরের প্রাপ্ত অংশ তাকে মোহর হিসাবে দান করলাম। যার মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম’।[5] নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন।[6] তবে সমাজে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং হাতে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে।


(৯) খুৎবা পড়া ও কবুল বলানো : আমাদের সমাজে কবুল বলানোর জন্য কাযী বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বরের অনুমতি নিয়ে দু’জন সাক্ষীসহ কনের নিকট চলে যান। কাযী গিয়ে বরের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে কবুল বলতে বলেন। কবুল বলার পর কাযী ছাহেব বরের নিকট ফিরে আসেন এবং মেয়ের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে মেয়েকে গ্রহণ করার জন্য কবুল বলতে বলেন।  তিন বার কবুল বলার পর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এভাবে বিবাহ পড়ানো শারঈ পদ্ধতি নয়। ইসলামের নিয়ম হ’ল বিবাহের পূর্বে একজন বিবাহের খুৎবা পাঠ করবেন।[7] এরপর মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক বিবাহের প্রস্তাব করবেন। এসময় দু’জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন। তখন বর সরবে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বলবেন। এরূপ তিনবার বলা উত্তম।[8] শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের নিকট থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন। বর বোবা হ’লে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে পরিচিতিমূলক ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ হ’তে পারে।[9]

বিবাহের খুৎবা নিম্নরূপ-

إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ – يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوْتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُم مُّسْلِمُوْنَ (ال عمران 102)– يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللهَ الَّذِيْ تَسَاءلُوْنَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْباً (النساء 1)– يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْداً، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيْماً (الأحزاب 70-71)– [10]

অতঃপর বিবাহ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কথা বলবেন।

(১০) বিবাহ শেষে দো‘আ পাঠ : বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত সকলে বর-কনের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে-

بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِى خَيْرٍ ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার প্রতি বরকত নাযিল করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণে মিলিত করুন’।

(১১) বাসর ঘর ও কনে সাজানো : বিয়ের পর বর-কনেকে একত্রে থাকার জন্য বাসর ঘরের ব্যবস্থা করা ও কনেকে সাজিয়ে সুন্দর করে বরের সামনে উপস্থিত করা সুন্নাত।[12]

(১২) বিবাহের ঘোষণা দেওয়া : বিবাহ হচ্ছে একটি প্রকাশ্য সামাজিক অনুষ্ঠান। তাই বিয়ের অনুষ্ঠান সকলকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, ‘তোমরা বিবাহের অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর’।[13] এজন্য বিবাহের সময় ইসলামে দফ বা একমুখা ঢোল বাজানোকে জায়েয বলা হয়েছে। রুবাই বিনত মুআবিবয ইবনু আফরা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) এলেন এবং আমার বিছানার ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার বিছানার ওপর বসে আছ। সে সময় আমাদের ছোট মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাতপ্রাপ্ত আমাদের বাপ-চাচাদের শোকগাঁথা গাচ্ছিল’।[14]

বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য :

(১) স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে হাত রেখে দো‘আ করা : নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন মহিলাকে বিবাহ করবে অথবা চাকর ক্রয় করবে, সে যেন তার কপালে হাত রেখে বিসমিল্লাহ পড়ে বলে, اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তার মঙ্গল ও যে মঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’।[15]

(২) স্বামী-স্ত্রী জামা‘আতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা : শাকীক (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, জনৈক ব্যক্তি আগমন করল, তাকে আবু হারীয বলে ডাকা হ’ত। তারপর তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি একজন যুবতী কুমারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। আর আমি ভয় করছি যে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ এয়াদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব-ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং রাগ-অসন্তুষ্টি শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান ইচ্ছা করছে যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বৈধ করেছেন তা সে তোমাদের নিকট ঘৃণা সৃষ্টি করবে। সুতরাং সে (তোমার স্ত্রী) যখন তোমার কাছে আসবে তখন তাকে জামা‘আত সহকারে তোমার পিছনে দু’রাক‘আত ছালাত পড়তে নির্দেশ দিবে।[16]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বরনিতো তিনি বলেন, স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে এবং বলবে, اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِى أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ- اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍو فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান’।[17]

(৩) সহবাসকালে দো‘আ পাঠ : রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ স্ত্রীর কাছে আসলে সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শায়তা-না ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা’। অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাদের শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন’।[18]


(৪) সহবাসের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা : বিবাহের পর মহিলা ঋতুবতী হ’লে সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মহিলাদের পিছন দ্বারে সহবাস করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পিছনপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মাদ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল’।[19]

(৫) স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা : সহবাসের পরে ঘুমাতে ও পানাহার করতে চাইলে কিংবা পুনরায় মিলিত হ’তে চাইলে মাঝে ওযূ করে নেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْمَلاَئِكَةُ جِيْفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوْقِ وَالْجُنُبُ إِلاَّ أَنْ يَتَوَضَّأَ ‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না; কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ওযূ করে’।[20]


(৬) ওয়ালীমা করা : বিবাহের পরে বরের অন্যতম কর্তব্য হ’ল ওয়ালীমা করা। আলী (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) যখন ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়লা আনহা)-কে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বললেন, ‘অবশ্যই নববধুর জন্য ওয়ালীমা হ’তে হবে’।[22] ওয়ালীমার মাধ্যমে বিবাহের কথা সকলের মাঝে প্রচার হয়। আনাস ইবনে মালেক (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন,مَا أَوْلَمَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى شَىْءٍ مِنْ نِسَائِهِ، مَا أَوْلَمَ عَلَى زَيْنَبَ أَوْلَمَ بِشَاةٍ ‘রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) স্বীয় বিবি যয়নাবের বিবাহে যত বড় ওয়ালীমা করেছিলেন, তত বড় ওয়ালীমা তিনি পরবর্তী কোন স্ত্রীর বিবাহে করেননি। তাতে তিনি একটি বকরী দিয়ে ওয়ালীমা করেছেন’।[23] আনাস (রাদদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) যেদিন যয়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা)-এর সাথে বাসররাত উদযাপন করলেন, সেদিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করলেন এবং মুসলিমদেরকে তৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত খাওয়ালেন। অতঃপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন এবং তাদের প্রতি সালাম করে তাদের জন্য দো‘আ করলেন। আর তারাও তাঁকে সালাম করলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তাঁর বাসর রাতের সকালে এরূপ করতেন’।[24]

কয়দিন ওয়ালীমা করা যাবে :

ওয়ালীমার নামে আমাদের সমাজে বড় লোকদের মিলন মেলা বসে, যেখানে ছেলে বা মেয়ের অভিভাবকদের দৃষ্টি থাকে উপহারের দিকে। ফলে দরিদ্র লোকজন এসব অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ ওয়ালীমার দাওয়াতে উপহার দেওয়া বা নেওয়া রাসূলের সুন্নাত নয়, সুন্নাত হ’ল সৎ ব্যক্তিগণকে দাওয়াত দেওয়া। তারা দাওয়াত গ্রহণ করে ওয়ালীমাতে আসবেন ও নবদম্পতির ভবিষ্যত মঙ্গলের জন্য দো‘আ করবেন। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন,لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ ‘তুমি শুধুমাত্র মুমিনের সাথী হবে, আর কেবল আল্লাহভীরু ব্যক্তিই তোমার খাদ্য খাবে’।[25] অন্যত্র রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন,شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيْمَةِ يُدْعَى لَهَا الأَغْنِيَاءُ، وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ، وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ ‘খাদ্যের মধ্যে নিকৃষ্ট খাবার ঐ ওয়ালীমার খাবার যাতে শুধু ধনীদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় এবং দরিদ্রদেরকে ত্যাগ করা হয়। আর ওয়ালীমার দাওয়াত যে কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করল’।[26]

কোন মুসলিম ভাই ওয়ালীমার দাওয়াত দিলে দাওয়াত কবুল করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বলেন, إِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيْمَةِ فَلْيَأْتِهَا– ‘তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করা হ’লে সে যেন তাতে অংশগ্রহণ করে’।[27]

বিবাহে প্রচলিত প্রথা, যা ত্যাগ করা প্রয়োজন :

(১) বিবাহের তারিখ নির্ধারণ : বছরের কোন মাস বা দিনকে বিবাহের জন্য নির্ধারণ করা অথবা বিরত থাকা শরী‘আত বিরোধী। নির্দিষ্ট কোন দিনে, কারো মৃত্যু বা জন্মদিনে বিবাহ করা যাবে না মনে করা গুনাহের কাজ। আল্লাহর কাছে বছরের প্রতিটি দিনই সমান। মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন দিন নির্ধারণ করতে পারবে।

(২) যৌতুক : বর্তমানে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের বিবাহে যৌতুক একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবাহের সময় কনের পক্ষ থেকে বরকে বা বরপক্ষকে কিছু দিতে হবে, এটা ইসলাম সমর্থন করে না; বরং ছেলে বা ছেলেপক্ষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়েকে মোহর প্রদান করবে। আল্লাহ বলেন, وَآتُوْا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)। হিন্দু ধর্মের ‘পণ’ প্রথা থেকে মুসলিম সমাজে ‘যৌতুক’ প্রথার প্রচলন হয়। এ প্রথা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

(৩) মোহরকে বংশীয় মর্যাদার প্রতীক বা নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসাবে মনে করা : বিবাহে মোহরের মত ফরয কাজকে আজকাল বংশ-মর্যাদা বা তালাক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নারীর হাতিয়ার হিসাবে অনেকে মনে করেন। এজন্য ছেলের সামর্থ্যের দিকে লক্ষ্য না করে মেয়েপক্ষ তাদের বংশমর্যাদা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারণ করেন। আবার অনেকে মনে করেন বিবাহে মোহর বেশী ধার্য করা থাকলে ছেলেপক্ষ মেয়েকে তালাক দিতে পারবে না বা তালাক দিতে চাইলে প্রচুর টাকা দিতে হবে। এই উভয় ধারণাই ইসলাম বিরোধী। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর যামানায় লোকেরা এক মুষ্টি খাদ্যের বিনিময়েও বিবাহ করতেন।[28] এছাড়া কিছু না থাকায় কেবল কুরআন শিক্ষাদানের বিনিময়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) জনৈক ব্যক্তির বিবাহ দিয়েছেন।[29]

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন,

اَلاَ لاَ تُغَالُوْا صَدُقَةَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوْقِيَّةً–

‘সাবধান! তোমরা নারীদের মোহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না। কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের এবং আখেরাতে আল্লাহর নিকট তাক্বওয়ার বিষয় হ’ত, তবে তোমাদের চেয়ে এ ব্যাপারে নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)-ই অধিক উপযুক্ত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বার উকিয়ার বেশী দিয়ে তাঁর কোন স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন অথবা তাঁর কোন কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই’।[30] নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলআলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, خَيْرُ الصِّدَاقِ أَيْسَرُهُ ‘উত্তম মোহর হচ্ছে, যা দেয়া সহজ হয়’।[31]

(৪) থুবড়া প্রথা : বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বর ও কনেকে বিবাহের দু’তিন দিন পূর্বে নিজ নিজ বাড়ীতে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে রাতের প্রথমাংশে মাহরাম, গায়রে মাহরাম পুরুষ-নারী, যুবক-যুবতী সকলে মিষ্টি, ফল-মূল ও পিঠা-পায়েস ইত্যাদি মুখে তুলে খাওয়ায়। সেই সাথে নব যুবতীরা গীত গেয়ে পয়সা আদায় করে। এসব রীতি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং এর মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পায় এবং পর্দাহীনতা ও যেনার দিকে ধাবিত হয়।

(৫) আংটি পরানো : আজকাল মুসলমানদের অধিকাংশ বিবাহে আংটি বদলের রীতি চালু রয়েছে।অনেকাংশ দেখা যাই ছেলে মানে বর কে সোনার আংটি পড়িয়ে দেওয়া হই।।মনে রাখতে হবে সোনা পরা ছেলেদের জন্য হারাম।।

(৬) গায়ে হলুদ : গায়ে হলুদের নামে আমাদের সমাজে বিবাহের দু’একদিন পূর্বে বর ও কনের সর্বাঙ্গে বর-কনের ভাবী, চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোনেরা মিলে হলুদ মাখার যে অনুষ্ঠান করে, তা ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া নিজে অথবা মাহরাম ব্যক্তি কর্তৃক বর-কনেকে হলুদ মাখানো যায়। আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত,

أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ قَالَ مَا هَذَا؟ قَالَ إِنِّى تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ، أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ.

‘নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু)-এর গায়ে হলুদ রঙের আলামত দেখে বললেন, এটা কিসের রঙ? তিনি বললেন, আমি একটি মেয়েকে খেজুরের আটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার এ বিয়েতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হ’লেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর’।[33]

(৭) বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য বাজানো : আমাদের সমাজের বিবাহ অনুষ্ঠানের অন্যতম ব্যঞ্জন হ’ল বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী বিভিন্ন অশ্লীল গান-বাদ্যের আয়োজন করা। বিবাহের ২/৩ দিন আগে থেকেই এই নাচ-গানের আসর চলে, শেষ হয় বিবাহের কয়েকদিন পর। অথচ ইসলামে এই অশ্লীল গান-বাদ্যকে হারাম করা হয়েছে। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’।[34] অন্যত্র রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَىَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ ‘আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া ও তবলা’।[35] রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর যুগে বিবাহসহ বিভিন্ন সময় দফ বাজানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। বিবাহের ঘোষণা করার জন্য দফ বা একমুখা ঢোল বাজানো বৈধ।[36]

(৮) মহিলা বরযাত্রী : মহিলাদের যে কোন সময়ই বেপর্দা হয়ে সাজসজ্জা করে বের হওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বিবাহের সময় মহিলারা সাজগোজ করে পাতলা কাপড় পরিধান করে পর্দাহীনভাবে বরের সাথে কনের বাড়ীতে যায়। এটা ইসলামে বৈধ নয়। যদি মহিলাদেরকে একান্তই যেতে হয় তাহ’লে পর্দার সাথে শালীন হয়ে যেতে হবে।

(৯) সাজগোজ করা : বর্তমানে বিবাহের অনুষ্ঠানে পাত্র-পাত্রীকে বিভিন্নভাবে সাজানোর প্রথা চালু আছে। বিউটি পারলার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। অনেকে সাজ নষ্টের আশংকায় ছালাত পরিত্যাগ করে। এসব সাজসজ্জা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। তবে স্বাভাবিক সাজসজ্জা দোষণীয় নয়। আবার বিবাহে বরকে স্বর্ণের আংটি উপহার দেওয়া হয়। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কেননা পুরুষদের সোনা ব্যবহার হারাম।[37] এতদ্ব্যতীত নেইল পালিশ ব্যবহার, কপালে টিপ দেওয়া, নখ বড় রাখা ইত্যাদি সবই বিধর্মীদের আচরণ। এগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’।[38]

(১০) অপচয় করা : আজকাল অধিকাংশ বিবাহে অপচয় করতে দেখা যায়। অনেকে আবার অপচয় করতে গিয়ে ঋণী হয়ে পড়ে। যেমন বিবাহের দাওয়াতের জন্য দামী কার্ড ছাপানো, শুধু বিবাহে ব্যবহারের জন্য বাহারী দামী পোশাক ক্রয় করা, পটকা-আতশবাজি ফুটান, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা, রঙ ছিটাছিটি করা ইত্যাদি। ইসলামে এসব অপচয় হারাম। কুরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْراً ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৭)।

(১১) অনৈসলামী রীতি : বিবাহের অনুষ্ঠানে বাঁশের কুলায় চন্দন, মেহেদি, হলুদ, কিছু ধান-দূর্বা ঘাস, কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির চাটি নিয়ে মাটির চাটিতে তৈল দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। তারপর বর-কনের কপালে তিনবার হলুদ মাখায়। এমনকি মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন জ্বালানো, বর-কনের মুখে আগুনের ধোঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-দুলিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। কোন কোন এলাকায় বর-কনেকে গোসল করতে নিয়ে যাওয়ার সময় মাথার উপরে বড় চাদরের চার কোণা চারজন ধরে নিয়ে যায়। বিবাহ করতে যাওয়ার সময় বরকে পিঁড়িতে বসিয়ে বা সিল-পাটায় দাঁড় করিয়ে দুধ-ভাত খাওয়ানো হয়। । এসব প্রথা ইসলামে নেই। এতদ্ব্যতীত আজকাল মহিলারা তাদের চোখের ভুরু উঠায়, মাথায় কৃত্রিম চুল লাগায়, দাঁতের মাঝে কেটে ফাঁকা করে, হাত-পায়ের নখ বড় রাখে, যা শরী‘আত সমর্থিত নয়।

(১২) বিবাহের বয়স নির্ধারণ : আমাদের দেশে ছেলে-মেয়ের বিবাহের জন্য বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত বয়সের পূর্বে কেউ বিবাহ করতে পারবে না, করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটা শরী‘আতবিরোধী আইন। ইসলাম প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সামর্থ্যবান নারী-পুরুষকে চরিত্র সংরক্ষণের জন্য বিবাহের নির্দেশ ও অনুমতি দিয়েছে।[39] যখন নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা)-কে বিবাহ করেন তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তার বয়স ছিল ৯ বছর এবং তিনি ৯ বছর নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর সঙ্গে জীবন কাটান।[40]

পরিশেষে বলা যায়, বিবাহ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, যা ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক নির্দেশিত। এতে পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। কিন্তু তা পূর্ণ ইখলাছ সহকারে শরী‘আতসিদ্ধ পন্থায় সম্পন্ন হ’তে হবে। অন্যথা তা ইহকালে যেমন কল্যাণ বয়ে আনবে না; পরকালেও কোন ছওয়াব বা বিনিময় পাওয়া যাবে না। তাই এ বিষয়ে সকলকে সজাগ ও সচেতন হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!

সূত্র:::::
[1]. বুখারী হা/৫১৫১, মুসলিম হা/১৪১৮, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩১৪৩।

[2]. বুখারী হা/৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, মুসলিম হা/১৪২৫, বুলূগুল মারাম হা/৯৭৯।

[3]. আবু দাউদ হা/২১২৫, নাসাঈ হা/৩৩৭৫, বুলূগুল মারাম হা/১০২৯।

[4]. বুখারী হা/৫১৫০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

[5]. আবূদাঊদ হা/২১১৭।

[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২।

[7]. সাইয়েদ সাবেক, ফিকহুস সুন্নাহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ২য় প্রকাশ ১৯৯৮খ্রিঃ), ২/১৫৩।

[8]. বুখারী হা/৯৫, মিশকাত হা/২০৮।

[9]. শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৪৪ পৃঃ।

[10]. আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৩১৪৯।

[11]. আবুদাউদ হা/২১৩০, তিরমিযী হা/১০৯১, ইবনে মাজাহ হা/১৯০৫, মিশকাত হা/২৩৩২।

[12]. বুখারী, ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৬, ইরওয়া হা/১৮৩১।

[13]. ইবনু হিববান, ত্বাবারানী, ইরওয়া হা/১৯৯৩।

[14]. বুখারী হা/৫১৪৭ ‘বিয়ে ও ওয়ালীমায় দফ বাজানো’ অনুচ্ছেদ।

[15]. আবুদাউদ হা/২১৬০, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৪৬।

[16]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ; আলবানী, আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ৩।

[17]. তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯০০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭; সিলসিলা আছার আছ-ছহীহাহ হা/৩৬১।

[18]. বুখারী হা/১৪১, ৩২৭১, ৫১৬৫; মুসলিম হা/১৪৩৪; আহমাদ হা/১৯০৮, বুলূগুল মারাম হা/১০২০।

[19]. ইবনু মাজাহ হা/৬৩৯; তিরমিযী হা/১৩৫; মিশকাত হা/৫৫১, হাদীছ ছহীহ।

[20]. আবুদাউদ হা/৪১৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩, সনদ হাসান।

[22]. মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ২৪।

[23]. বুখারী হা/৫১৬৮, মুসলিম হা/২৫৬৯, মিশকাত হা/৩২১১।

[24]. বুখারী হা/৫১৫৪।

[25]. আবুদাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৫০১৮।

[26]. বুখারী হা/৫১৭৭, মুসলিম হা/১৪৩২।

[27]. বুখারী হা/৫১৭৩, মুসলিম হা/১৪২৯।

[28]. ছহীহ আবু দাউদ হা/১৮৫৫।

[29]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২, ‘মোহর’ অনুচ্ছেদ।

[30]. তিরমিযী হা/১১১৪, ইবনু মাজাহ হা/১৮৮৭, মিশকাত হা/৩২০৪ ‘মোহরানা’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ।

[31]. আবুদাউদ হা/২১১৭, বুলূগুল মারাম হা/১০৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭৯।

[32]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ৩৮।

[33]. বুখারী ৫০৭২, মুসলিম হা/১৪২৭, মিশকাত হা/৩২১০।

[34]. বুখারী হা/৫৫৯০, মিশকাত হা/৫৩৪৩।

[35]. আবু দাউদ হা/৩৬৯৬, মিশকাত হা/৪৫০৩, হাদীছ ছহীহ।

[36]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলাহ নং-৩৭।

[37]. নাসাঈ হা/৪০৫৭; আবু দাঊদ হা/৪০৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৯৫, সনদ ছহীহ।

[38]. আহমাদ, আবুদাউদ হা/৪০৩১, মিশকাত হা/৪৩৪৭।

[39]. বুখারী/৫০৬৫, মুসলিম/১৪০০, মিশকাত/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়, বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।

[40]. বুখারী হা/৫১৫৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

কোরবানীর গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা

কোরবানীর গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা



কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। - মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূল লক্ষ্য হল আল্লাহ তা'য়ালার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ করা হল।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ৯ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালিকে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর মালিক নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর মালিকে নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথক ভাবে মালিকে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

মালিকে নেসাবের মেয়াদ

কুরবানীর মালিকেনেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

কুরবানীর সময়

মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। জিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। - মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

নাবালেগের কুরবানী

নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা আদায় হবে।- বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। - ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। - রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানী করতে না পারলে

কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টি বাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয। - বুখারী শরীফ ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

রাতে কুরবানী করা

১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। - মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে

কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। - কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

যে সব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। - কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়স সীমা

উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। - কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী আদায় হবে না। - মুসলিম শরীফ ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

সাত শরীকের কুরবানী

সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানী আদায় হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। - মুসলিম শরীফ ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

যদি কেউ আল্লাহ তা'য়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই আদায় হবে। - তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী আদায় হবে না⁉️

যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। - কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

কুরবানীর উত্তম পশু

কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। - মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

খোড়া পশুর কুরবানী

যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। - জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। - জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। - জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগত ভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। - জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

অন্ধ পশুর কুরবানী

যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। - জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানী দাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। - সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। - কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী আদায় হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। - খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। - আহকামে ঈদুল আযহা, www.yanabi.in

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। - রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা

কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানী দাতা পুরুষ হলে জবাই স্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। - মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে

অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী আদায় হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। - রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হাল চাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হাল চাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে। - মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। - মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে

কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। - কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। - মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

কুরবানীর গোশত তিন দিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়। - আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। - ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতা কারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র

ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবেন না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দিবেন না।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া না জায়েয। - ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানী দাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। - আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

কুরবানী দাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। - সূরা হজ্ব ২৮, মুসলিম শরীফ ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আজহার কুরবানী

যে সকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আজহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আজহার কুরবানী করা জরুরি হবে। - ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা

সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। - সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। - রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। - ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সাওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবেন।

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানী দাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

কুরবানী দাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানী দাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। - আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা

কুরবানীর চামড়া কুরবানী দাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। - আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। - ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে

কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

ঈদুল আজহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ জিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। - জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানী দাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। - বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। - ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। - আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। - কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা

কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। - খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬

বিবাহের গুরুত্ব ও ইসলামিক পদ্ধতি ও তার সাথে প্রচলিত কিছু বাতিল....হাদিস ও কোরআন এর আলোকে আলোচনাদি..

:বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি::::

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আলাইহিসালাম )-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া (আলাইহিসালাম )-কে সৃষ্টি করে আদম (আলাইহিসালাম )-এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। অবশেষে শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহুয়ালাইহিওসাল্লালাম) জাহেলী যুগের সকল কুসংস্কার দূর করে নারীদেরকে বিবাহের মাধ্যমে মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে মুসলমানগণ বিবাহের ইসলামী পদ্ধতি ভুলে অনেকটা বিধর্মীদের রসম-রেওয়াজের সাথে মিশে গেছে। আলোচ্য প্রবন্ধে বিবাহের গুরুত্ব ও নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হ’ল-
বিবাহের গুরুত্ব :

মহান আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন (যারিয়াত ৫১/৪৯)। এমনকি লতা-পাতা, গাছ-পালাও (ইয়াসীন ৩৬/৩৬)। তেমনি মহান আল্লাহ মানুষকে নারী-পুরুষে বিভক্ত করেছেন (হুজুরাত ৪৯/১৩, নিসা ৪/১) এবং একে অপরের প্রতি আকর্ষণীয় করে দিয়েছেন। ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, বসবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণের একমাত্র পন্থা হিসাবে বিবাহের প্রচলন করা হয়েছে। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের অধীনস্থদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও’ (নূর ২৪/৩২)।

বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তার দৃষ্টিকে সংযত করে যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুয়ালাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন,يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ– ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে, তাদের বিবাহ করা কর্তব্য। কেননা বিবাহয় দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম’।[1] অন্য হাদীছে রাসূল (সাল্লালাহুয়ালাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন, تَزَوَّجُوا الْوَدُوْدَ الْوَلُوْدَ فَإِنِّىْ مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ ‘তোমরা স্নেহপরায়ণ বেশী সন্তান জন্ম দানকারিণীকে বিবাহ কর। কেননা আমি বেশী উম্মত নিয়ে (ক্বিয়ামতের দিন) গর্ব করব’।[2]

বিবাহ করা সমস্ত নবীদের সুন্নাত। আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً ‘তোমার পূর্বে আমরা অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম’ (রা‘দ ১৩/৩৮)। রাসূল (সাল্লালাহুয়ালাইহি ওসাল্লাম)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহিসালাম ) বলেছেন, وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়’।[3]

বিবাহ না করে চিরকুমার ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি ইসলামে নেই। সা‘আদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, رَدَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ التَّبَتُّلَ، وَلَوْ أَذِنَ لَهُ لاَخْتَصَيْنَا ‘রাসূল (সাল্ললাহু আলাইহিসালাম ) ওছমান ইবনু মাযঊনকে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম’।[4] আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসূল (সাল্লালাহুয়ালাইহিওসাল্লালাম) নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকে নিষেধ করেছেন’।[5]

বিবাহের মাধ্যমে বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। মানুষ তার জৈবিক চাহিদা বিবাহ ব্যতীতও মিটাতে পারে; কিন্তু ইসলামে তা অবৈধ, হারাম। পক্ষান্তরে বিবাহের ব্যবস্থা না থাকলে বংশীয় ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মানুষের পরিচয় বিলীন হয়ে যাবে, একে অপরের প্রতি দয়া-মায়া কমে যাবে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাবে।

অনেকে দরিদ্র হওয়ার কারণে স্ত্রী-সন্তান লালন-পালন না করতে পারার ভয়ে বিবাহ করে না। অথচ আল্লাহ বিবাহের কারণে দরিদ্রকে সম্পদশালী করে থাকেন। আল্লাহ বলেন, إِنْ يَكُوْنُوْا فُقَرَاء يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ– ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দিবেন’ (নূর ২৪/৩২)। আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের উপর আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে- (১) যে দাস নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়। (২) যে লোক বিবাহ করে নিজের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়। (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে যেতে চায়’।[8]

স্বামী-স্ত্রীর বিবাহের বন্ধন আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ বলেন, وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِّتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিণীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া দান করেন’ (রূম ৩০/২১)। বিবাহের মাধ্যমেই সতীত্ব ও চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা যায়। আল্লাহ বলেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ– ‘স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক স্বরূপ, আর তোমরা তাদের জন্য পোষাক স্বরূপ’ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)। যে সমাজে বিবাহ ব্যতীত অবাধে নারী-পুরুষের মেলামেশা চলে সেখানে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। পরিশেষে অবৈধ মেলামেশার কারণে পরকালে এরা জাহান্নামের কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে।

বিবাহ করা দ্বীনের পূর্ণতা অর্জনের পরিচায়ক। রাসূল (সাল্লাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করল, তখন সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল’।[9] সুতরাং বিবাহ না করলে ব্যক্তি গোনাহগার না হ’লেও এতে শরী‘আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে অগ্রাহ্য করা হয়।

বিবাহের হুকুম :

অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিবাহের হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-

১. ওয়াজিব : যার শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এবং যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও পদস্খলনের আশংকা করে, তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحاً حَتَّى يُغْنِيَهُمْ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে’ (নূর ২৪/৩৩)। কেননা আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে মুক্ত থাকা ওয়াজিব, যা বিবাহ ব্যতীত সম্ভব নয়’ (নূর ৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ‘কেননা এটা চোখ অবনমিত রাখে ও লজ্জাস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করে’।[10]

২. মুস্তাহাব : যার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজেকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষমতা আছে, তার জন্য বিবাহ করা মুস্তাহাব। তবে একাকী জীবন-যাপনের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম। কেননা ইসলামে সন্ন্যাসব্রত বা বৈরাগ্য নেই।[11]

৩. হারাম : যার দৈহিক মিলনের সক্ষমতা ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই তার জন্য বিবাহ করা হারাম। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৩১)। অনুরূপভাবে যিনি যুদ্ধের ময়দানে বা কাফির-মুশরিক দেশে যুদ্ধরত থাকেন তার জন্য বিবাহ হারাম। কেননা সেখানে তার পরিবারের নিরাপত্তা থাকে না। তদ্রূপ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকলে এবং অন্য স্ত্রীর মাঝে ইনছাফ করতে না পারার আশংকা করলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হারাম। যেমন আল্লাহ বলেন, فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে’ (নিসা ৪/৩)।[12]

বিবাহের শর্তাবলী ও রুকন :

বিবাহের শর্ত হ’ল চারটি। (১) পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন (২) উভয়ের সম্মতি।[13] (৩) মেয়ের ওলী থাকা।[14] (৪) দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা।[15] বিবাহের দু’টি রুকন হ’ল ঈজাব ও কবূল (নিসা ১৯)। উক্ত শর্তাবলীর কোন একটি পূরণ না হ’লে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, যে মেয়ের ওলী নেই, তার ওলী হবেন সরকার।[16]

বিবাহের নিয়ম-পদ্ধতি :

ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিবাহ তার ব্যতিক্রম নয়। বিবাহের সংক্ষিপ্ত নিয়ম হ’ল- উপযুক্ত বয়সের ছেলে-মেয়েকে তাদের অভিভাবক বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। সম্ভব হ’লে ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখে তাদের অভিমত জানাবে। উভয়ে একমত হ’লে নির্দিষ্ট দিনে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মেয়ের অভিভাবক নির্দিষ্ট মহরের বিনিময়ে ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। ছেলে কবুল বলে গ্রহণ করবে। যাকে আরবীতে ঈজাব ও কবূল বলা হয়। নিম্নে দলীলসহ বিবাহের বিস্তারিত নিয়ম উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) নিয়ত শুদ্ধ করা : বিবাহের আগে বর-কনের উচিত নিয়ত ঠিক করা। নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই বিবাহ করতে হবে। তাহ’লে উভয়েই ছওয়াব লাভ করবে। রাসূল (সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন,

وَفِىْ بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيَأْتِى أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُوْنُ لَهُ فِيْهَا أَجْرٌ قَالَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِىْ حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيْهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِى الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ.

‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাক্বা। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্ললাম)! আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে এবং এজন্য সে নেকী লাভ করবে? তিনি বললেন, তোমাদের কি মনে হয়, যদি সে ঐ চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহ’লে তার কোন গুনাহ হ’ত না? (অবশ্যই হ’ত)। অতএব সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়’।[17]

(২) পাত্র-পাত্রীর সম্মতি : বিবাহের মূল হ’ল পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে। যারা সারা জীবন একসাথে ঘর-সংসার করবে। সেকারণ বিবাহের পূর্বে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ছেলে-মেয়েকে তার অসম্মতিতে বিবাহ করতে বাধ্য উচিত নয়। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوْا النِّسَاءَ كَرْهاً ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে’ (নিসা ৪/১৯)।

নবী করীম (সাল্লালাহুতায়লা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন, لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا؟ قَالَ أَنْ تَسْكُتَ. ‘বিবাহিতা মেয়েকে তার পরামর্শ ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, তার অনুমতি কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি’।[18]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, وَالْبِكْرُ تُسْتَأْذَنُ فِىْ نَفْسِهَا وَإِذْنُهَا صُمَاتُهَا ‘যুবতী-কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে পিতাকে তার অনুমতি নিতে হবে। আর তার অনুমতি হচ্ছে চুপ থাকা’।[19]

কুমারী মেয়ে বিবাহের প্রস্তাব শুনার পর চুপ থাকলে তার সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে সরাসরি সম্মতি নিতে হবে। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন, ‘বিধবা মেয়েরা নিজেদের ব্যাপারে ওলীর থেকে অধিক হকদার’।[20] এছাড়াও কোন মেয়েকে অভিভাবক তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দিলে সে ইচ্ছা করলে বিবাহ বহাল রাখতে পারে, ইচ্ছা করলে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে’।[21]

(৩) অভিভাবকের সম্মতি : ছেলে-মেয়ের সম্মতির পাশাপাশি অভিভাবকের সম্মতিরও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি যরূরী। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ ‘অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই’।[22] তিনি আরো বলেন,

أَيُّمَا امْرَأَةٍ نُكِحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ وَلِيِّهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَلَهَا الْمَهْرُ بِمَا اسْتَحَلَّ مِنْ فَرْجِهَا فَإِنِ اشْتَجَرُوْا فَالسُّلْطَانُ وَلِىُّ مَنْ لاَ وَلِىَّ لَهُ-

‘যদি কোন নারী তার ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, তবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল। এইরূপ অবৈধ পন্থায় বিবাহিত নারীর সাথে সহবাস করলে তাকে মোহর দিতে হবে। কারণ স্বামী মোহরের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানকে ব্যবহার করেছে। যদি ওলীগণ বিবাদ করেন, তবে যার ওলী নেই তার ওলী দেশের শাসক’।[23]

ছেলে-মেয়েকে লালন-পালনের পাশাপাশি অভিভাবকের অন্যতম দায়িত্ব হ’ল যোগ্য স্থানে বিবাহের ব্যবস্থা করা। অভিভাবক হ’ল প্রাপ্ত বয়স্ক বুদ্ধিসম্পন্ন নিকটাত্মীয়-স্বজন। যেমন- পিতা, দাদা, ভাই, চাচা ইত্যাদি। তবে পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ ওলী হ’তে পারবে না। অপর দিক কোন মহিলাও ওলী হ’তে পারে না।[24] রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, لاَ تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ وَلاَ تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ نَفْسَهَا فَإِنَّ الزَّانِيَةَ هِىَ الَّتِى تُزَوِّجُ نَفْسَهَا ‘কোন নারী কোন নারীর বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজে বিবাহ করতে পারে না। কোন নারী নিজেই বিবাহ করলে সে ব্যভিচারী বলে গণ্য হবে’।[25] অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) জনৈকা মহিলার অনুমতিবিহীন বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেন।[26]


(৪) পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা : বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার আগে লক্ষ্য করতে হবে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে সমতা আছে কি-না। সম্পদ ও বংশ মর্যাদার সমতা হ’লে ভাল হয়, তবে যরূরী নয়। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে সমতা থাকা যরূরী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) এরশাদ করেন, ‘সাধারণতঃ মেয়েদের চারটি গুণ দেখে বিবাহ করা হয়- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তোমরা ধার্মিক মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। অন্যথায় তোমাদের উভয় হস্ত অবশ্যই ধূলায় ধূসরিত হবে’।[27] রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেন,وَانْكِحُوا الأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ ‘তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা দেখে বিবাহ কর’।[28] রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেন,مَنْ تَرْضَوْنَ دِيْنَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوْهُ ‘যার দ্বীনদারী এবং উত্তম আচরণে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে বিবাহ দাও’।[30]



(৫) বিবাহের প্রস্তাব : বর অথবা কনে যে কোন এক পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসতে পারে। এমনকি বর সরাসরি কনেকে অথবা কনে সরাসরি বরকেও প্রস্তাব দিতে পারে। ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) হ’তে বর্ণিত যে, যখন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু)-এর কন্যা হাফছাহ (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা) খুনায়স ইবনু হুযাইফা সাহমীর মৃত্যুতে বিধবা হ’লেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর একজন ছাহাবী ছিলেন এবং মদীনায় ইন্তেকাল করেন। ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, আমি ওছমান ইবনু আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু)-এর কাছে গেলাম এবং হাফছাহকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিলাম। তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। তারপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমার কাছে এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, এখন আমি যেন তাকে বিবাহ না করি। ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, তারপর আমি আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালায়ানহু)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, যদি আপনি চান তাহ’লে আপনার সঙ্গে ওমরের কন্যা হাফছাহকে বিবাহ দেই। আবূবকর (রাদ্বিয়াল্লাহুতালায়ানহু) নীরব থাকলেন, প্রতি-উত্তরে আমাকে কিছুই বললেন না। এতে আমি ওছমান (রাদ্বদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু)-এর চেয়ে অধিক অসন্তুষ্ট হ’লাম। এরপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) হাফছাহকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালেন এবং হাফছাহকে আমি তাঁর সঙ্গে বিবাহ দিলাম’।[31] অন্য এক হাদীছে এসেছে, আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, একজন মহিলা নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাআলাইহি ওসাল্লাম)! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে’?[32]

তবে বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পূর্বে লক্ষ্য করতে হবে যে, এই মহিলাকে অন্য কেউ বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে কি-না? যদি দিয়ে থাকে তাহ’লে নতুন করে প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) এক ভাই (ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে) দর-দাম করলে অন্যকে দরদাম করতে নিষেধ করেছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেয় বা তাকে অনুমতি দেয়’।[33]


অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সাল্লাহুতায়ালা আলাআলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন, وَلاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ، حَتَّى يَنْكِحَ أَوْ يَتْرُكَ. ‘কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না করে, যতক্ষণ না সে বিবাহ করে অথবা ছেড়ে দেয়’।[34]

যাদেরকে বিবাহ করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে তাদেরকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ নিম্নোক্ত মহিলাদেরকে হারাম করেছেন। তিনি বলেন,

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ غَفُوراً رَّحِيْماً-

‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনী, তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমাদের ঔরষজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোন একত্রে বিবাহ করা, কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (নিসা ৪/২৩)।[35]


(৬) পাত্র-পাত্রী দর্শন : বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন, فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء ‘তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে’ (নিসা ৪/৩)।

মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) আমাকে বললেন,هَلْ نَظَرْت إلَيْهَا؟ قُلْتُ : لاَ، قَالَ فَانْظُرْ إلَيْهَا، فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا. ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসা জন্মাবে’।[36]

আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, একজন লোক নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনছারী একটি মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বললেন,هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِىْ عُيُوْنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا- ‘তাকে দেখেছ কি? কেননা আনছারদের লোকের চোখে দোষ থাকে’।[37]


পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের যেনার শামিল। অনেক সময় পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় বিষয়কে না দেখে তার রূপ-লাবণ্য, বংশ ও সম্পদ দেখেই বিবাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম পাত্রের উচিত রূপ, বংশ ও সম্পদের চেয়ে পাত্রীর দ্বীনদারীকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। পরিপূর্ণ দ্বীনদারী পাওয়া গেলে অন্য গুণ কম হ’লেও দ্বীনদার মহিলাকেই বিবাহ করা উচিত, তাহ’লে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেন, تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِيْنِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ. ‘মেয়েদের চারটি গুণ বিবেচনা করে বিবাহ করা হয়; তার সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ ও সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। কিন্তু তুমি দ্বীনদার মহিলাকেই প্রাধান্য দাও। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।[38] অন্যত্র রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন,إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوْهُ إِلاَّ تَفْعَلُوْا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيْضٌ ‘যখন তোমাদের নিকট কোন বর বিবাহের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্রকে পসন্দ কর, তাহ’লে তার সাথে বিবাহ সম্পন্ন কর। অন্যথা যমীনে বড় বিপদ দেখা দিবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে’।[39]


এছাড়া দেখার নাম করে আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়ের একসাথে একাকী সময় কাটানো, পার্কে বসে বসে আলাপ করা, হবু বধুকে নিয়ে নির্জনে চলে যাওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেন, لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، وَلاَ تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ‘কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে’।[40] অন্যত্র রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেন, ‘যখন কোন পুরুষ-মহিলা নির্জনে একত্রিত হয়, তখন তৃতীয়জন হিসাবে সেখানে শয়তান উপস্থিত হয়’।[41]

(৭) সাক্ষী : বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য ন্যায়পরায়ণ ঈমানদার দু’জন সাক্ষী থাকবে। সাক্ষীগণ মহরের পরিমাণ ও বরের স্বীকারোক্তি নিজ কানে শুনবেন। আল্লাহ বলেন, فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ فَارِقُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ وَأَشْهِدُوْا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ- ‘যখন তারা ইদ্দতে পৌঁছে যায়, তখন যথাবিধি তাদেরকে রেখে দিবে, নতুবা তাদেরকে যথাবিধি বিচ্ছিন্ন করে দিবে এবং তোমাদের মধ্য হ’তে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে’ (তালাক্ব ৬৫/২)। সাক্ষীগণ পুরুষই হ’তে হবে। একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা কিংবা চারজন মহিলা হ’লেও চলবে না।[42] কেননা রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বলেছেন,لاَ نِكَاحَ إِلاَّ بِوَلِىٍّ وَشَاهِدَىْ عَدْلٍ ‘বিবাহ সংগঠিত হবে না অভিভাবক ও দু’জন সাক্ষী ব্যতীত’।[43]

সূত্র::::::
[1]. বুখারী/৫০৬৫; মুসলিম/১৪০০; মিশকাত/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়; বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।

[2]. আবূদাউদ হা/২০৫০; নাসাঈ হা/৩২২৭; ইরওয়াউল গালীল হা/১৭৮৪; মিশকাত হা/৩১৯১।

[3]. বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১; মিশকাত হা/১৪৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কিতাব ও সুন্নাহ অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।

[4]. বুখারী হা/৫০৭৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮১, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

[5]. বুখারী হা/৫০৭৩; নাসাঈ হা/৩২১৩; মিশকাত হা/৩০৮১।

[6] . মাওলানা আবদুর রহীম, পরিবার ও পারিবারিক জীবন, (ঢাকা : খাইরুন প্রকাশনী, ২০০৫), পৃঃ ৮৫।

[7]. তদেব, ৮৫।

[8]. নাসাঈ হা/৩২১৮, হাদীছ হাসান।

[9]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৩০৯৬, সনদ হাসান।

[10]. বুখারী হা/৫০৬৬; মুসলিম হা/১৪০০; আবু দাঊদ হা/২০৪৬।

[11]. ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৩০।

[12]. শরহুল মুমতে‘, ১২/৯।

[13]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬।

[14]. আহমাদ, তিরমিযী; মিশকাত হা/৩১৩০।

[15]. ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৮।

[16]. আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১।

[17]. মুসলিম হা/১৬৭৪, মুসনাদে আহমাদ হা/২১৫১১।

[18]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬ ‘বিবাহতে অভিভাবক ও মেয়ের অনুমতি’ অনুচ্ছেদ।

[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭।

[20]. মুসলিম হা/১৪২১, তিরমিযী, নাসাঈ, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৫।

[21]. বুখারী , মুসলিম, তিরমিযী, নাসঈ, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৮।

[22]. আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৩১৩০, হাদীছ ছহীহ।

[23]. আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩১।

[24]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শরহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৭৩ পৃঃ।

[25]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত হা/৩১৩৭, বুলূগুল মারাম হা/৯৮৬; হাদীছ ছহীহ।

[26]. বুখারী হা/৫১৩৮, মিশকাত হা/৩১২৮।

[27]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২, ৩০৯০, ‘বিবাহ’ অধ্যায়।

[28]. ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭।


[30]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০।

[31]. বুখারী হা/৫১২২।

[32]. বুখারী হা/৫১২০।

[33]. বুখারী হা/৫১৪২, মুসলিম হা/১৪১২,বুলূগুল মারাম হা/৯৭৮।

[34]. বুখারী হা/৫১৪৪, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১৪৪।

[35]. বিস্তারিত দ্র. মাসিক আত-তাহরীক এপ্রিল ২০০১।

[36]. তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১০৭।

[37]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৯৮।

[38]. বুখারী হা/৫০৯০, মুসলিম হা/১৪৬৬, মিশকাত হা/৩০৮২, বুলূগুল মারাম হা/৯৭১।

[39]. তিরমিযী হা/১০৮৪-৮৫; মিশকাত হা/৩০৯০; সিললিা ছহীহাহ হা/১০২২।

[40]. বুখারী হা/৩০০৬।

[41]. আহমাদ. তিরমিযী হা/২১৬৫, ইবনে হিববান হা/৪৫৫৭, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৩০।

[42]. শরহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৯৭ পৃঃ।

[43]. বায়হাকী ৭/১১২, ইরওয়া হা/১৮৪৪, শরহুল মুমতে‘ ১২/৯৪।
........................

(৮) মোহরানা নির্ধারণ : বিবাহের আগে মোহরানা নির্ধারণ করা এবং বিবাহের পর তা স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া ফরয। আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النَّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন,أَحَقُّ الشُّرُوْطِ أَنْ تُوْفُوْا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوْجَ ‘(বিবাহে) সবচেয়ে বড় শর্ত যেটা তোমরা পূর্ণ করবে, সেটা হ’ল যা দ্বারা তোমরা লজ্জাস্থানকে হালাল কর’।[1] অর্থাৎ মোহর।

সাহল ইবনু সা‘দ (রাদ্বিয়াল্লাহুয়াতায়ালা আনহু) হ’তে বর্ণিত, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম )-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলআলাইহিসালাম )! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলালাইহি ওসাল্লালাম) তার দিকে তাকালেন এবং তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তার সম্পর্কে কোন ফায়ছালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)-এর ছাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম)! যদি আপনার বিবাহের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিবাহ দিয়ে দিন। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কী? সে উত্তর দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি-না। তারপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়লা আলাইহিসালাম ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার চলে গেল। ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)! লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। সাহল (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি লুঙ্গির অর্ধেক মহিলাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়লা আলাইহি ওসাল্লালাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহ’লে তার কোন কাজে আসবে না। আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। এরপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর সে উঠে দাঁড়াল ও নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) তাকে যেতে দেখে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কী তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহিসালাম ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাকে তোমার অধীনস্থ করে দিলাম’।[2]

স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহরানা দিতে হবে। যখন আলী (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা)-কে বিবাহ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তাঁকে বললেন, তুমি ফাতিমাকে (মোহরানা স্বরূপ) কিছু দাও। আলী (রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু) বললেন, আমার নিকট কিছু নেই। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) তাকে বললেন, তোমার হুতামী বর্মটি কোথায়’?[3] অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন, تَزَوَّجْ وَلَوْ بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيْدٍ ‘তুমি বিবাহ কর, একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হ’লেও’।[4]

উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ মোহর বাকী রাখা যায়। তবে সেটা ঋণের অন্তর্ভুক্ত। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর বাকী থাকলে সন্তান অবৈধ হবে একথা ঠিক নয়। কেননা বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা শর্ত নয়। রাসূল (সাল্লালাহুতায়ালা আলাআলাইহি ওসাল্লালাম) একজন ব্যক্তিকে বললেন, অমুক মহিলার সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) বললেন, অমুক ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি তাদের বিবাহ দিলেন। কিন্তু কোন মোহর নির্ধারণ করলেন না এবং মহিলাকে কিছু দিলেন না। ঐ ব্যক্তি হোদায়বিয়ার ছাহাবী ছিলেন। পরে তিনি খায়বরের গণীমতের অংশ পান। এ সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হ’লে তিনি বলেন, স্ত্রীর জন্য আমার কোন মোহর নির্ধারিত ছিল না। এক্ষণে আমি আমার খায়বরের প্রাপ্ত অংশ তাকে মোহর হিসাবে দান করলাম। যার মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম’।[5] নবী করীম (সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লালাম) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন।[6] তবে সমাজে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং হাতে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে।


(৯) খুৎবা পড়া ও কবুল বলানো : আমাদের সমাজে কবুল বলানোর জন্য কাযী বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বরের অনুমতি নিয়ে দু’জন সাক্ষীসহ কনের নিকট চলে যান। কাযী গিয়ে বরের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে কবুল বলতে বলেন। কবুল বলার পর কাযী ছাহেব বরের নিকট ফিরে আসেন এবং মেয়ের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে মেয়েকে গ্রহণ করার জন্য কবুল বলতে বলেন। 


  • ...... তিন বার কবুল বলার পর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এভাবে বিবাহ পড়ানো শারঈ পদ্ধতি নয়। ইসলামের নিয়ম হ’ল বিবাহের পূর্বে একজন বিবাহের খুৎবা পাঠ করবেন।[7] এরপর মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক বিবাহের প্রস্তাব করবেন। এসময় দু’জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন। তখন বর সরবে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বলবেন। এরূপ তিনবার বলা উত্তম।[8] শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের নিকট থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন। বর বোবা হ’লে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে পরিচিতিমূলক ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ হ’তে পারে।[9]

    বিবাহের খুৎবা নিম্নরূপ-

    إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ – يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوْتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُم مُّسْلِمُوْنَ (ال عمران 102)– يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللهَ الَّذِيْ تَسَاءلُوْنَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْباً (النساء 1)– يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْداً، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيْماً (الأحزاب 70-71)– [10]

    অতঃপর বিবাহ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কথা বলবেন।

    (১০) বিবাহ শেষে দো‘আ পাঠ : বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত সকলে বর-কনের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে-

    بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِى خَيْرٍ ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার প্রতি বরকত নাযিল করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণে মিলিত করুন’।[11][বিবাহের গুরুত্ব ও ইসলামিক পদ্ধতি ও তার সাথে প্রচলিত কিছু বাতিল.